দি এম্পটি আর্থ (চতুর্থ অংশ)
-বিশ্বদীপ মুখার্জী
……………
পর্ব – ১৬
………………
পরদিন সকালেই স্বপ্নীলের ফোন এসেছিল অর্চিষ্মানের কাছে। ফোন করে সে বলল – ‘ডাঃ চৌধুরী ইন্টরভিউয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে। আজ বিকেলে সময় সময় দিয়েছে সে। রেডি থাকিস। ঠিক বিকেল পাঁচটা।’
ডাঃ দিবাকর চৌধুরীর ফার্ম হাউস ডায়মন্ড হারবার রোডে। মাত্র দু’জনের আসার অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল। সেটা স্বপ্নীল আর অর্চিষ্মান দু’জনেই জানতো। সময় দেওয়া হয়েছিল মাত্র তিরিশ মিনিট।
‘আমাদের হাতে সময় কিন্তু খুব কম। তিরিশ মিনিটের মধ্যে আমাদের কাজ সেরে ফেলতে হবে।’ রওনা দেওয়ার আগে স্বপ্নীল বলল অর্চিষ্মানকে।
অর্চিষ্মান এক নতুন রূপ ধারণ করেছে। লম্বা লম্বা চুল, পিছনে পনিটেল। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, চোখে কালো ফ্রেমের সানগ্লাস।
‘তিরিশ মিনিট অনেক আমার জন্য। বেশি প্ৰশ্ন করা আমার স্বভাব নয় স্বপ্নীল। দু’ চারটে প্রশ্নতেই আসল তথ্যটা বের করে আনার চেষ্টা করি আমি। আজও সেই চেষ্টাটাই করবো।’ নিজের কথা শেষ করলো অর্চিষ্মান।
নিউজ চ্যানেলের গাড়ি করেই তারা গেল। বেশি জিনিস তাদের কাছে ছিল না। একটা ক্যামেরা আর একটা মাইক। নিউজ চ্যানেলের একটা আই ডি কার্ড অর্চিষ্মানের নামে বানিয়ে দিয়েছিল স্বপ্নীল। ঠিক বিকেল পাঁচটায় তাদের গাড়ি ডাঃ দিবাকর চৌধুরীর ফার্ম হাউসের মুখ্য ফটকের সামনে এসে দাঁড়ালো। ফটকের কাছেই দু’টো বন্দুকধারী গার্ড দাঁড়িয়ে। অর্চিষ্মান, স্বপ্নীল এবং গাড়ির চালকের আই কার্ড দেখলো তারা। তিনজনকেই গাড়ি থেকে বের করে মুখ্য ফটক সংলগ্ন একটা ছোট্ট ঘরে নিয়ে গেল। ছোট্ট একটা ক্যামেরা দিয়ে তিনজনেরই ছবি তোলা হলো। জমা নিয়ে নেওয়া হলো তাদের মোবাইল ফোন। ফার্ম হাউসের ভিতর শুধু দু’জনের যাওয়ার অনুমতি আছে। ড্রাইভারকে গাড়িতে বসেই অপেক্ষা করতে হবে। দু’টো গার্ড ছাড়া সেখানে এক তৃতীয় ব্যক্তির আবির্ভাব হলো। সে অর্চিষ্মান ও স্বপ্নীলকে ফার্ম হাউসের ভিতর নিয়ে গেল। একটা বেশ বড় ড্রইং রুমে তাদের বসতে দিয়ে সেই লোকটা বলল – ‘আপনারা এখানেই অপেক্ষা করুন। ডক্টর বাবু একটু পরেই আসবেন।’
নিজের কথা শেষ করে সেই লোকটা উধাও হয়ে গেল।
ড্রইং রুমের দেয়ালে বেশ কিছু পেন্টিংস সাজানো। দু’ দিকের দেয়ালে দু’টো এ সি। প্লাস্টার অফ পেরিসের চারটে স্ট্যাচু ঘরের চার কোণে দাঁড়িয়ে আছে। মেঝেতে পাতা দামী কার্পেট। ঘরের মাঝখানে গোল করে ঘেরা সোফা সেট। তার মাঝে সেন্টার টেবিল। দু’জনে সোফাতে বসে অপেক্ষা করছে ডাঃ দিবাকর চৌধুরীর। প্রায় দশ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো তাদের। দশ মিনিট পর অর্চিষ্মান প্রথমবার সামনে থেকে দেখলো বিখ্যাত ডক্টর এবং গবেষক দিবাকর চৌধুরীকে। দিবাকর চৌধুরীর শেষ সাংবাদিক সম্মেলনে স্বপ্নীল দেখেছিল তাকে। অর্চিষ্মান তাকে সামনাসামনি এই প্রথম দেখলো। উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট আট ইঞ্চির মত। গায়ের রঙ ফর্সা, মাথায় ব্যাক ব্রাশ করা সাদা চুল, মুখে দাড়ি – গোঁফের চিহ্নমাত্র নেই। চেহারায় যে আভিজাত্যের ছাপ আছে সেটা বলাই বাহুল্য। ডাঃ চৌধুরীর ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই অর্চিষ্মান ও স্বপ্নীল উঠে দাঁড়ালো। ডাঃ চৌধুরী দু’জনকে বসার ইশারা করে নিজেও সোফাতে বসলেন। স্বপ্নীল নিজের পরিচয় দিলো এবং অর্চিষ্মানের পরিচয় করালো ডাঃ চৌধুরীর সাথে। অর্চিষ্মানের নাম এখন দেবব্রত অধিকারী।
‘কী জানতে চাও তোমরা?’ ডাঃ চৌধুরী স্বপ্নীলকে জিজ্ঞাসা করলেন।
‘আপনার নতুন প্রজেক্টের বিষয়।’ জবাব দিলো স্বপ্নীল।
‘প্রজেক্ট বলতে অর্গ্যান ব্যাংক, তাই তো?’
‘ইয়েস স্যার।’
‘অর্গ্যান ব্যাংকের বিষয় তো সে দিন আমি প্রেস কনফারেন্সে সব কিছুই বলেছি। নতুন কিছু বলার মত আছে বলে তো মনে পড়ছে না।’ ডাঃ চৌধুরী বললেন।
‘বলার মত আছে ডাঃ চৌধুরী। অনেক কিছুই বলার মত আছে।’ এবার অর্চিষ্মান বলল। অর্চিষ্মান ততক্ষণে ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছে।
ডাঃ দিবাকর চৌধুরী ভ্রুকুটি করে তাকালেন অর্চিষ্মানের দিকে।
‘কী এমন বলার মত আছে যেটা আমি সে দিন প্রেস কনফারেন্সে বলিনি?’
অর্চিষ্মান ও স্বপ্নীল এক অপরের দিকে একবার তাকালো।
‘আপনার ইতিহাস জানতে চাই ডাঃ চৌধুরী। জানতে চাই আপনার অতীত। পশ্চিমবঙ্গের এক ছোট শহরে জন্মগ্রহণ করা থেকে শুরু করে বিশ্ব বিখ্যাত ডক্টর এবং গবেষক হওয়ার সম্পূর্ণ যাত্রাটা আমরা জানতে চাই এবং সকলকে জানাতে চাই।’ কথাটা প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলল অর্চিষ্মান।
খানিক চুপ থেকে অর্চিষ্মানের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ডাঃ চৌধুরী। অর্চিষ্মান ক্যামেরা অন করলো। স্বপ্নীল মাইক এগিয়ে দিলো ডাঃ চৌধুরীর দিকে।
‘পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলাতে আপনার জন্ম। সেখানেই লেখাপড়া আপনার। সেখান থেকে আজ বিশ্ব বিখ্যাত ডক্টর এবং গবেষক।’ স্বপ্নীল বলল।
ডাঃ চৌধুরী বলতে শুরু করলেন – ‘ডক্টর হওয়ার ইচ্ছে আমার ছোট থেকেই। আমার নিজের কাকা ডক্টর ছিলেন। তাকে দেখেই আমার মনে ইচ্ছে জন্মায় যে আমি ডক্টর হবো। ডাক্তারিকে আমি কোনও দিন নিজের পেশা হিসেবে দেখিনি। চেষ্টা করে গেছি লোকেদের সেবা করার। ঈশ্বরের কৃপায় নিজের চেষ্টায় অনেকটাই সফল হতে পেরেছি। নাম, যশ এগুলো ক্ষণিকের। আজ আছে তো কাল নেই। আমি চিরকাল চেয়েছি লোকেদের হৃদয়ে নিজের স্থান তৈরি করার। বিশেষ করে গরীবদের হৃদয়ে। আজ যুগ অনেক এগিয়ে গেছে, তাও আজও বহু গরীব মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তাদের কাছে টাকা থাকে না ওষুধ কিনবার। এ সব জিনিস আমার কোনও দিনই সহ্য হতো না। আমি কিছু করতে চাইতাম তাদের জন্য। করেছি, সফল হয়েছি নিজের কাজে। আমার ওষুধের কোম্পানি থেকে অনেক কম দামের ওষুধ তৈরি করা হয়। উদ্দেশ্য একটাই.. বহু লোকের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া। আজ আকাশ ছোঁয়া মূল্য বৃদ্ধিতেও আমরা খুবই অল্প দামে ওষুধ দিই, যাতে গরীবরা বাঁচতে পারে। এখনও মনে আছে, তখন আমি ক্লাস টেন-এ পড়ি। আমার পাশের বাড়ির কাকিমা বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন। খুব ভালোবাসতেন আমায়। গরীব ছিলেন। তাও কাকু বহু দিন কষ্ট করে কাকিমার চিকিৎসা চালালেন। দিনে দিনে ওষুধের দাম আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। শেষে আর পারলেন না তিনি। ঘটনাটা ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল আমায়। আমার চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটেছে। চোখের আড়ালে তো আরও অনেক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যেটার বিষয় আমরা জানতেই পারছি না। কাকিমার মত তো বহু লোক প্রাণ হারাচ্ছে। ছোট বেলায় ভাবতাম যে ডক্টর হয়ে বিনা মূল্যে গরীবদের চিকিৎসা করবো। কিন্তু যখন আস্তে আস্তে বড় হলাম, চিন্তা ধারায় পরিবর্তন ঘটলো। গরীবদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা করে তাদের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব না। আমি তো ফ্রীতে তাদের দেখবো। কিন্তু তারা ওষুধ কিনবে কোথা থেকে? তখন থেকেই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে যেমন করে হোক ওষুধের দাম কম করার ব্যবস্থা করতেই হবে। না তো বহু প্রাণ অকালেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে নেবে।’
‘একটা ছোট প্রশ্ন আছে।’ কথাটা অর্চিষ্মান বলল ক্যামেরার পিছন থেকে।
আবার অদ্ভুত দৃষ্টিতে ডাঃ দিবাকর চৌধুরী তাকালেন অর্চিষ্মানের দিকে।
‘কী প্রশ্ন?’ জিজ্ঞাসা করলেন তিনি।
‘ডাঃ অনুপম ব্যানার্জীর সাথে আপনার সম্পর্ক তো খুব ভালো ছিলো। তাই না?’ অর্চিষ্মান প্রশ্ন করলো।
ডাঃ চৌধুরীর দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো। এমন প্রশ্ন হয়তো তিনি আশা করেননি। তার কপালে অল্প অল্প ঘামের বিন্দু দেখতে পেলো অর্চিষ্মান। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলেন ডাঃ চৌধুরী। বললেন – ‘হুম। ভালো সম্পর্ক ছিল আমাদের। খুব ভালো ডক্টর ছিল সে। কী যে হয়ে গেল, কোথায় যে চলে গেল ভগবান জানে।’
‘তাকে শেষ বারের মত আপনার সাথেই দেখা গিয়েছিল।’ বলল অর্চিষ্মান।
‘হুম, জানি। তার বাড়ি গিয়েছিলাম। সেই ডেকে পাঠিয়েছিল।’
‘কেন ডেকে পাঠিয়েছিল সেটা কি জানতে পারি?’
এবার শুধু দৃষ্টি নয়, গলার আওয়াজটাও বেশ কড়া হলো ডাঃ চৌধুরীর।
‘আপনারা এখানে ইন্টারভিউ নিতে এসেছেন না তদন্ত করতে এসেছেন?’
অর্চিষ্মান ক্যামেরার পিছন থেকে সরে গিয়ে ডাঃ চৌধুরীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল – ‘প্ৰশ্নগুলোকে ইন্টারভিউযের অংশ মনে করুন ডাঃ চৌধুরী। হঠাৎ ডাঃ ব্যানার্জী আপনাকে নিজের বাড়িতে কেন ডেকে পাঠিয়েছিলেন?’
‘বহু বছর আগেকার কথা। ওতো মনে রাখা সম্ভব নয়।’
‘সেটাও ঠিক। তবে একটা কথা আপনাকে না বলে থাকতে পারছি না ডক্টর চৌধুরী।’ অর্চিষ্মান স্বপ্নীলের পাশে বসে বলল – ‘এটা সেই সালেরই কথা যে সালে ডাঃ ব্যানার্জী অন্তর্ধান হয়েছিলেন। মানে 2036 সালের কথা। আপনার সাথে শেষ দেখা হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তার আগে তিনি একটা বক্তৃতা দেন। সেই বক্তৃতাটা এখনও ইন্টারনেটে আছে। আপনি যে কথাগুলো বলছেন সে কথাগুলো অনেক আগেই তিনি বলে গেছেন।’
‘কী বলতে চাও তুমি?’ গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলেন ডাঃ চৌধুরী।
‘ডাঃ অনুপম ব্যানার্জীর নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে পর্যন্ত আপনি গবেষণার ক্ষেত্রে বেশি দূর এগোতে পারেননি। গবেষণার ক্ষেত্রে তখন ডক্টর ব্যানার্জীর নাম আপনার থেকে অনেক এগিয়ে। হঠাৎ করে তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তারপর থেকে শুরু হয় আপনার যাত্রা। কম মূল্যের ওষুধের বিষয় ডাঃ ব্যানার্জী নিজের বক্তৃতাতে বলেছিলেন। পরবর্তী কালে আপনি সেই কাজে হাত দিলেন এবং সফল হলেন। এটা কি শুধু কাকতলীয়? কাকতলীয় মেনে নেওয়া যেতো যদি আপনার সাথে ডক্টর ব্যানার্জীর ভালো সম্পর্ক না থেকে থাকতো।’
অর্চিষ্মানের কথায় মাথা গরম হলো ডাঃ চৌধুরীর। উচ্চ কন্ঠে তিনি বললেন – ‘হোয়াট ননসেন্স। তুমি কি বলতে চাও আমি ডক্টর ব্যানার্জীর আইডিয়া চুরি করেছি?’
‘আমি তো কিছুই বলছি না ডাঃ চৌধুরী। শুধু অনুমানের কথা বলছি।’ শান্ত কন্ঠে অর্চিষ্মান বলল।
‘নিজের অনুমান নিজের কাছে রাখো। এটা ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে না আমার উপর এলিগেশন লাগানো হচ্ছে। এখানে তোমরা তামাশা করতে এসেছ? তোমরা হয়তো জানো না যে আমার সময় কত দামী। আমি চাইলে এক্ষুণি তোমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারি। তোমাদের নিউজ চ্যানেলে ফোন করে যদি তোমাদের নামে কমপ্লেন করি তাহলে তোমাদের চাকরি চলে যাবে সেটা জানো কি?’
মুচকি হেসে অর্চিষ্মান বলল – ‘জানি। সাথে এটাও জানি যে আপনি এটা করবেন না। আপনাকে দু’টো কথা বলা হয়নি। ওই দু’টো কথা শুনলে আপনি হয়তো একটু শান্ত হবেন। প্রথম কথা হলো ডাঃ অনুপম ব্যানার্জীর নিরুদ্দেশের ফাইলটা রিওপেন হয়েছে। আর দ্বিতীয় কথা হলো আপনার সামনে যে দু’জন বসে আছে তাদের মধ্যে একজন মানে আমি এন এস ডব্ল্যূ’র অফিসার।’
অর্চিষ্মান ও স্বপ্নীল লক্ষ্য করলো হঠাৎ করে ডক্টর চৌধুরীর মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
‘অনেক ঘটনা ঘটে গেছে ডাঃ চৌধুরী। জল অনেক গড়িয়ে গেছে। ইনভেস্টিগেশন শুরু হয়েছে আবার থেকে। কোনও পুরনো ফাইল রিওপেন হওয়া মানে আপনি জানেন নিশ্চই। আগে যা যা হয়নি, এখন সেগুলো হবে। ডক্টর অনুপম ব্যানার্জীর নিরুদ্দেশের মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। আপনি তার কাছের বন্ধু ছিলেন। কিছু তো আপনি নিশ্চই জানেন। পরবর্তী কালে আপনি সে পথেই হেঁটেছেন যে পথ ডাঃ ব্যানার্জী দেখিয়ে গিয়েছিলেন।’
‘তুমি ভুল করছো অফিসার। ডাঃ ব্যানার্জীর নিরুদ্দেশের বিষয় আমি কিছুই জানি না। তূমি বারবার বলছো যে তার দেখানো পথে আমি হেঁটেছি। তাতে ভুল কী করেছি? ডাঃ ব্যানার্জীর স্বপ্ন ছিলো যে ওষুধের মূল্য এতই কম হোক যে সেটা সাধারণ গরিব জনতার কাছে পৌঁছতে পারে। তার নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণে তার সেই স্বপ্নটা পুরো হতে পারেনি। আমি তার কাছের বন্ধু ছিলাম। তাই আমার কর্তব্য ছিলো নিজের বন্ধুর স্বপ্নটা পুরো করার। আমি তার স্বপ্নকে পুরো করে তার আত্মাকে শান্তি দিয়েছি। আমার তো মনে হয় না যে আমি কোনও ভুল কাজ করেছি। কারোর স্বপ্নকে পুরো করা যদি অন্যায়, তাহলে আমি অন্যায় করেছি। তোমার নজরে যদি সেটা অন্যায় মনে হয় তাহলে তুমি গ্রেপ্তার করতে পারো আমায়।’ কথাগুলো দৃঢ় কন্ঠে বললেন ডাঃ চৌধুরী।
‘জেনে খুশি হলাম ডাঃ চৌধুরী যে আপনি নিজের বন্ধুর অপূর্ণ স্বপ্নকে পূর্ণ করেছেন। তাহলে তো বলতে হয় আপনার বন্ধুর আরও একটা অপূর্ণ স্বপ্ন ছিলো। আপনি নিশ্চয়ই সেটাও পূর্ণ করার চেষ্টায় লেগে আছেন।’
‘কোন স্বপ্নের কথা বলছো তুমি?’
অর্চিষ্মান এবার মুখে কিছু বলল না। নিজের মোবাইল বের করে ডাঃ ব্যানার্জীর সেই বক্তৃতার ভিডিওটা চালিয়ে ডাঃ চৌধুরীর সামনে রেখে দিলো।
‘ভিডিওটা ভালো করে দেখুন ডাঃ চৌধুরী। বিশেষ করে শেষ অংশটা।’
অর্চিষ্মানের দিকে একবার রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে ভিডিও দেখতে শুরু করলেন ডাঃ চৌধুরী।
চলবে…